স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট ওসমানী বিমানবন্দর

 সাত বছরে ৬৩ কোটি টাকার স্বর্ণ উদ্ধার

স্বর্ণ চোরাচালানিদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে নিরাপদ স্বর্ণ চোরা চালানের রুট হিসে
বে বেছে নিয়েছে। নানা কৌশলে তারা এই স্বর্ণ পাচার করে সিলেটের বাজারে নিয়ে আসছে। এর কিছু অংশ ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায়। কিন্তু বেশির ভাগ চালান অধরা থেকে যায়। বিশেষ করে, ইদানীং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে এই স্বর্ণ চোরাচালান হয়ে আসছে। কাস্টমসের একাধিক সূত্র জানায়, সৌদি আরব থেকেও স্বর্ণের ছোট ছোট চালান আসে মাঝেমধ্যে। তবে বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান রোধে তারা তৎপর। গোয়েন্দা তৎপরতাও অব্যাহত রয়েছে।

দেখা যায়, দুবাই থেকেই বেশি পরিমাণে স্বর্ণ চোরাচালান হয়ে আসছে। সর্বশেষ গত ২৭ ডিসেম্বর ওসমানী বিমানবন্দরে ৭ কোটি টাকা মূল্যের ১১ কেজি ২২০ গ্রাম স্বর্ণসহ দুবাই থেকে আসা চার যাত্রীকে আটক করে কাস্টমস বিভাগ। কাস্টমস বিভাগ জানায়, তারা ব্লান্ডার মেশিন ও আয়রন মেশিনের ভেতরে কৌশলে নিয়ে আসেন ঐ পরিমাণ স্বর্ণ। গত সাত বছরে আড়াই মণেরও বেশি স্বর্ণ উদ্ধার হয়েছে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে। ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বর দুবাইফেরত যাত্রী নরেন্দ্র নাথের কাছ থেকে ৬ কেজি ১৪৮ গ্রাম ওজনের ৩৮ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। তখন এর বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ওসমানীতে উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের বাজারমূল্য প্রায় ৬৩ কোটি টাকা।

গত ৭ বছরের মধ্যে চার বছরে উদ্ধার করা হয় দেড় মণ স্বর্ণ। আর বাকি সব স্বর্ণ উদ্ধার করা হয় পরবর্তী তিন বছরে। সূত্রমতে, ২০১৭ সালের জুলাই থেকে গত বছর ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ওসমানী বিমানবন্দরে ১৮টি স্বর্ণের চালান আটক করে কাস্টমস। এই চার বছরে ১৮টি চোরাচালানের ঘটনায় ৫৯ দশমিক ১৮ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। আটক স্বর্ণের চালানোর দাম প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। এসব স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১০টি। তবে মামলাগুলো এখনো বিচারাধীন। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে গত বছর ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওসমানী বিমানবন্দর থেকে উদ্ধারকৃত স্বর্ণের পরিমাণ প্রায় ১১১ কেজির বেশি। মণ হিসেবে এর ওজন আড়াই মণ।

গত ২০২০ সালে ৮ নভেম্বর দুবাইফেরত যাত্রী নরেন্দ্র নাথের কাছ থেকে ৬ কেজি ১৪৮ গ্রাম ওজনের ৩৮ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের দাম প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পরে নরেন্দ্র নাথকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। নরেন্দ্র নাথের বাড়ি মৌলভীবাজার এলাকায়।

২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই থেকে আসা জামিল আহমদ (২৮) নামের এক যাত্রীর কাছ থেকে ১৪টি স্বর্ণের বার ও কিছু স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন প্রায় দুই কেজি। যার দাম প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ১২টি বার বিশেষ ব্যবস্থায় জামিলের উরুতে আটকানো ছিল। জামিলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায়।

ওসমানী বিমানবন্দরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি থেকে আসা জাহিদ হোসেন নামের এক যাত্রীর কাছ থেকে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ৪ কেজি ৬৪ গ্রাম ওজনের ৪০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের দাম প্রায় ২ কোটি টাকা। এরপর জাহিদ হোসেনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে কাস্টমস।

একই বছরের ৩ জানুয়ারি ওসমানী বিমানবন্দরে ফ্লাই দুবাই দিয়ে আসা একটি ফ্লাইটে তল্লাশি চালিয়ে ৬০ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন প্রায় ৭ কেজি। যার দাম প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানের মেকানিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট কারিমুল ইসলামকে আটক করা হয়।

২০১৭ সালের ২৩ জুলাই আবুধাবি থেকে আসা বিমানের লাগেজ হোল্ডে অভিযান চালিয়ে ৩ কেজি ৫০০ গ্রাম ওজনের ৩০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। বিমানের ঐ ফ্লাইটটি সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরছিল। স্বর্ণের এই চালান আটকের ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।

২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুবাই থেকে আসা বিমানে তল্লাশি চালিয়ে ১৬টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন ১ কেজি ৮৭২ গ্রাম। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। একই বছরের ১৬ নভেম্বর ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ৯ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ৮০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের দাম প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের আসনের নিচে তল্লাশি চালিয়ে এসব স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। দুবাই থেকে আসা ঐ বিমানের দুটি সিটের নিচ থেকে কাগজে মোড়ানো অবস্থায় স্বর্ণের বারগুলো উদ্ধার করা হয়। তবে, এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

ঐ বছরের ১৭ মার্চ ৫৮০ গ্রাম ওজনের পাঁচটি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায়ও কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ২৪ এপ্রিল এক লন্ডন প্রবাসীর কাছ থেকে ৪৩২ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করে কাস্টমস। পরে ব্যাগেজ রুলস মোতাবেক বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ১৯ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করে কাস্টমস। এছাড়াও, ১০০ ও ২০০ গ্রাম স্বর্ণ আটক, শুল্কায়ন, ন্যায় নির্ণয়নের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলে জানা গেছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন